পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা | চম্পা কলা ও সাগর কলার স্বাস্থ্যগুণ

MOHAMMAD SABBIR
0

পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলার ছবিঃ 

পাকা কলা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য ফল। এর মিষ্টি স্বাদ, সহজ বহনযোগ্যতা এবং প্রচুর পুষ্টিগুণের কারণে এটি একটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে, যেখানে চম্পা কলা (Champa) এবং সাগর কলার (Sagori) মতো বিভিন্ন প্রকারভেদ পাওয়া যায়, এটি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি অপরিহার্য অংশ। এই আর্টিকেলে আমরা পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা, এর পুষ্টি মূল্য, এটি খেলে ওজন বাড়ে কিনা এবং এর সম্ভাব্য অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা | ড্রাগন ফল

পাকা কলার উপকারিতা ও স্বাস্থ্যগুণ (পাকা কলার উপকারিতা)

পাকা কলা শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি শরীরের জন্য অপরিহার্য অনেক পুষ্টি উপাদানের উৎস।

হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: পাকা কলায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ থাকে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা স্টার্চ পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাদ্য হিসেবে কাজ করে (প্রিবায়োটিক)।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: কলা হলো পটাশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সোডিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

শক্তি বৃদ্ধি: পাকা কলা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা যেমন সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ দ্রুত রক্তে মিশে যায়, যা বিশেষ করে ব্যায়ামের আগে বা পরে তাৎক্ষণিক শক্তির যোগান দেয়।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: কলায় থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: কলায় রয়েছে ভালো পরিমাণে আয়রন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

চম্পা কলা ও সাগর কলার বিশেষত্ব

কলা বিভিন্ন প্রকারের হয় এবং এদের স্বাদ ও পুষ্টিগুণেও সামান্য পার্থক্য দেখা যায়:

চম্পা কলা (Champa Kola): এটি সাধারণত ছোট এবং অপেক্ষাকৃত বেশি সুগন্ধযুক্ত ও মিষ্টি হয়। এতে শর্করার পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকতে পারে এবং এটি সাধারণত সাগরি কলার তুলনায় সহজে হজম হয় বলে মনে করা হয়।

সাগর কলা (Sagor Kola): এটি আকারে বড় এবং লম্বাটে হয়। এটিও মিষ্টি এবং এতে ফাইবার, পটাশিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিনের পরিমাণ সন্তোষজনক থাকে। প্রাতঃরাশের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় বিকল্প।

উভয় প্রকার কলাই স্বাস্থ্যকর এবং আপনার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। পুষ্টির দিক থেকে, উভয়ের মধ্যে মূল উপাদানগুলো একই থাকে।

পাকা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে?

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, পাকা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে? এর উত্তর হলো: সঠিক পরিমাণে খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম, বরং এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

ক্যালোরি ঘনত্ব: একটি পাকা কলায় ক্যালোরির পরিমাণ অন্যান্য ফলের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও এটি চর্বিহীন একটি ফল।

তৃপ্তি বৃদ্ধি: কলায় থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া বা স্ন্যাকিং-এর প্রবণতা কমে যায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

শক্তি এবং মেটাবলিজম: কলার প্রাকৃতিক শর্করা ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং কলার এই শক্তি সেই ক্ষেত্রে সহায়ক।

তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে বা অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত খাদ্যের সাথে কলা খেলে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়তে পারে এবং ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। মূল কথা হলো পরিমিতিবোধ।

একটি পাকা কলায় কত ক্যালরি থাকে?

কলার আকার ও প্রকারভেদে ক্যালোরির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, একটি মাঝারি আকারের (প্রায় ১১৮ গ্রাম) পাকা কলায় প্রায় ১০৫ থেকে ১১০ ক্যালরি থাকে।

এই ক্যালোরির বেশিরভাগই আসে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক শর্করা থেকে। এতে প্রোটিন ও ফ্যাট খুব কম পরিমাণে থাকে।

পাকা কলায় কি কি ভিটামিন আছে

কলা গাছঃ ছবি

পাকা কলায় কি কি ভিটামিন আছে?

পাকা কলা ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর। প্রধানত এতে নিম্নলিখিত ভিটামিনগুলো পাওয়া যায়:

         ভিটামিন                                   উপকারিতা
ভিটামিন B6 পাইরিডক্সিনমেটাবলিজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
ভিটামিন Cশক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে।
পটাশিয়ামউচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য মুখ্য।
ম্যাঙ্গানিজহাড়ের স্বাস্থ্য এবং মেটাবলিজম ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ফোলেট (ভিটামিন B9)কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয়।

পাকা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা (সতর্কতা)

পাকা কলার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

উপকারিতা (সংক্ষিপ্ত)

  • হজমে সহায়তা করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়।
  • আয়রনের উৎস।

সতর্কতা ও সম্ভাব্য অপকারিতা

ডায়াবেটিস: যেহেতু পাকা কলায় শর্করার পরিমাণ বেশি, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পাকা কলার (যা বেশি নরম হয়ে যায়) গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বেশি হতে পারে।

মাইগ্রেন: কিছু সংবেদনশীল মানুষের ক্ষেত্রে কলার মধ্যে থাকা টাইরামিন নামক উপাদান মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথার ট্রিগার হতে পারে।

দাঁতের সমস্যা: কলায় শর্করা এবং অম্লতা উভয়ই রয়েছে। খাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার না করলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।

অতিরিক্ত ফাইবার: খুব বেশি কলা খেলে বা হঠাৎ করে ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে সাময়িকভাবে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা পেট খারাপ হতে পারে।

পরামর্শ: একটি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ১-২ টি মাঝারি আকারের কলা খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর।


পাকা কলা নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর ফল। এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সহজে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং অসংখ্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা প্রদান করে। চম্পা কলা বা সাগর কলা—যেটিই হোক না কেন, এতে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন B6 এবং ভিটামিন C আমাদের হৃদযন্ত্র, হজম প্রক্রিয়া এবং সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ওজন বাড়ার ভয় না করে, পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত। আপনার নির্দিষ্ট কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, কলার পরিমাণ নির্ধারণের জন্য একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বিচক্ষণতার পরিচয়।

আমাদের অন্য একটি সাইট ভিজিট করতে সাব্বির.XYZ তে ক্লিক করুন সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন সহ পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় নানান টিপস। ধন্যবাদ সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ্‌ হাফেয। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!
To Top