শিং মাছের উপকারিতা ও শিং মাছের কাটা ফুটলে করণীয় কি?

MOHAMMAD SABBIR
0
শিং মাছের উপকারিতা ও শিং মাছের কাটা ফুটলে করণীয় কি
শিং মাছঃ ছবি

বাংলাদেশের খুব জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি মাছ হলো শিং মাছ বা sing mach। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মাছটি রোগীর পথ্য হিসেবে যুগ যুগ ধরে সমাদৃত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heteropneustes fossilis। শরীরে রক্ত বৃদ্ধি, দ্রুত আরোগ্য লাভ এবং বলবর্ধক হিসেবে এই মাছের জুড়ি নেই। তবে এর যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি অসাবধানতায় এর কাঁটা ফুটলে যন্ত্রণাও কম নয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা শিং মাছের উপকারিতা, কাঁটা ফোঁটার ঘরোয়া চিকিৎসা, চাষ পদ্ধতি এবং আনুষঙ্গিক আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

শিং মাছের উপকারিতা

শিং মাছ কেবল স্বাদের জন্য নয়, এর ঔষধী গুণের জন্যও পরিচিত। নিচে এর প্রধান কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

রক্তস্বল্পতা দূর করে: শিং মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বা লোহা থাকে। যারা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি মহৌষধ। নিয়মিত এই মাছ খেলে শরীরে দ্রুত হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়। 

প্রোটিনের উৎস: উন্নতমানের প্রোটিনে ভরপুর এই মাছ শরীরের টিস্যু গঠনে এবং ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে।

ক্যালসিয়ামের ভাণ্ডার: হাড় ও দাঁত মজবুত করতে শিং মাছ অত্যন্ত কার্যকর। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে যা অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করে। 

রোগীর দ্রুত আরোগ্য: দীর্ঘমেয়াদী অসুখ বা অস্ত্রোপচারের পর শরীর যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন চিকিৎসকরা শিং মাছের ঝোল খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এটি খুব সহজপাচ্য এবং শরীরকে দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে দেয়।

গর্ভাবস্থায় শিং মাছ খাওয়ার উপকারিতা

একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় শিং মাছ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।

ভ্রূণের বিকাশ: শিং মাছে থাকা প্রোটিন ও মিনারেল গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও মস্তিষ্কের গঠনে সহায়তা করে।

মায়ের রক্তশূন্যতা রোধ: গর্ভাবস্থায় অনেক মা রক্তশূন্যতায় ভোগেন। শিং মাছের আয়রন মায়ের শরীরে রক্তের চাহিদা পূরণ করে এবং ক্লান্তি দূর করে।

সহজ হজম: গর্ভাবস্থায় অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা দেয়। শিং মাছ সহজপাচ্য হওয়ায় এটি মায়েদের জন্য একটি আদর্শ খাবার।

শিং মাছের কাটা ফুটলে করণীয় বা শিং মাছ কাটা দিলে করণীয়
শিং মাছ: ছবি

শিং মাছের কাটা ফুটলে করণীয় বা শিং মাছ কাটা দিলে করণীয়

শিং মাছ ধরতে গিয়ে বা কাটতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। শিং মাছের বুকের দুই পাশে দুটি এবং পিঠে একটি অত্যন্ত শক্ত ও ধারালো কাঁটা থাকে। এই কাঁটার গোড়ায় বিষথলি থাকে। অসাবধানতাবশত হাতে বা পায়ে শিং মাছের কাটা ফুটলে করণীয় বা শিং মাছ কাটা দিলে করণীয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত জানানো হলো:

শিং মাছের কাঁটা বিঁধলে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়, যা অনেক সময় সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ঘাবড়ে না গিয়ে নিচের পদক্ষেপগুলো নিন:

কাঁটা অপসারণ: প্রথমেই দেখতে হবে কাঁটা বা কাঁটার কোনো অংশ ভাঙা অবস্থায় ভেতরে রয়ে গেছে কিনা। থাকলে চিমটা দিয়ে আলতো করে বের করে ফেলতে হবে।

রক্ত বের করে দেওয়া: ক্ষতস্থানটি চেপে কিছুটা রক্ত বের করে দিন। এতে বিষের তীব্রতা কিছুটা কমে যাবে। 

গরম পানির সেঁক (সবচেয়ে কার্যকরী): শিং মাছের বিষ মূলত প্রোটিন জাতীয়। এই বিষ তাপের সংস্পর্শে আসলে নষ্ট বা অকার্যকর হয়ে যায়। তাই সহনীয় মাত্রার গরম পানিতে ক্ষতস্থানটি ডুবিয়ে রাখুন অথবা গরম পানির সেঁক দিন। এতে খুব দ্রুত ব্যথা কমে যাবে।

লেবুর রস বা ভিনেগার: গরম পানি হাতের কাছে না থাকলে লেবুর রস বা ভিনেগার লাগাতে পারেন। তবে গরম পানি সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

 ডাক্তারের পরামর্শ: যদি ব্যথা দীর্ঘসময় থাকে, ক্ষতস্থান বেশি ফুলে যায় বা ইনফেকশন হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং টিটেনাস ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

শিং মাছ পরিষ্কার করার পদ্ধতি

অনেকেই শিং মাছ খেতে পছন্দ করেন কিন্তু কাটার ভয়ে বা পরিষ্কার করার ঝামেলার কারণে কিনতে চান না। সঠিক শিং মাছ পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানলে এটি মোটেও কঠিন নয়।

কালো দাগ দূর করা: শিং মাছের গায়ের পিচ্ছিল কালো পদার্থ দূর করার জন্য মাছগুলোকে একটি পাত্রে রেখে তাতে পেঁপে পাতা বা পেঁপে বাটা, অথবা ভিনেগার ও লবণ দিয়ে মেখে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ১০-১৫ মিনিট পর মেঝেতে বা জালের ব্যাগে ঘষলে মাছ একদম সাদা ও পরিষ্কার হয়ে যাবে। অনেকে ছাই ব্যবহার করেও এটি পরিষ্কার করেন।

কাঁটা ও রগ অপসারণ: মাছ কাটার সময় প্রথমেই প্লাস বা ধারালো বটি দিয়ে সাবধানে কাঁটাগুলো কেটে ফেলতে হবে। এরপর পেটের নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করার পাশাপাশি মাছের কানের দুই পাশে যে 'রগ' বা স্নায়ু থাকে (যা দেখতে সরু সুতার মতো), সেটি টেনে বের করে ফেলা উত্তম।

শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

বর্তমানে প্রাকৃতিক উৎসের পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি লাভজনক একটি ব্যবসা।

পুকুর প্রস্তুতি: শিং মাছ চাষের জন্য পুকুর ভালো করে শুকিয়ে চুন ও সার প্রয়োগ করে প্রস্তুত করতে হয়। পানির গভীরতা ৩-৪ ফুটের মধ্যে রাখা ভালো।

পোনা মজুদ: উন্নত জাতের সুস্থ ও সবল পোনা নির্বাচন করতে হবে।

খাবার: শিং মাছ নিশাচর এবং মাংসাশী স্বভাবের। তবে চাষের ক্ষেত্রে বাজারে পাওয়া যাওয়া ভাসমান বা ডুবন্ত ফিড খাওয়ানো হয়। এছাড়াও খৈল ও কুঁড়া ব্যবহার করা হয়।

বায়োফ্লক পদ্ধতি: বর্তমানে অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কিছু সতর্কতা

শিং মাছ অত্যন্ত উপকারী হলেও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন: ১. এলার্জি: যাদের বিশেষ কোনো সামুদ্রিক বা মিঠা পানির মাছে এলার্জি আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। ২. সঠিক রান্না: শিং মাছ অবশ্যই ভালো করে রান্না করে খাওয়া উচিত। আধা সেদ্ধ মাছ পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে। ৩. কাটার সময় সাবধানতা: জীবিত শিং মাছ নাড়াচাড়া করার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যাতে কাঁটা না ফোটে। শিশুদের থেকে এই মাছ দূরে রাখা উচিত।

আমাদের দেশীয় মাছের মধ্যে শিং মাছ পুষ্টিগুণে অনন্য। রক্তস্বল্পতা দূর করা থেকে শুরু করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের শারীরিক বিকাশে এর ভূমিকা অপরিসীম। শিং মাছের উপকারিতা যেমন অনেক, তেমনি এর কাঁটা ফোঁটার যন্ত্রণাও তীব্র। তাই এই মাছ ধরা বা কাটার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করলে এটি আমাদের আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বয়ে আনতে পারে। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় শিং মাছ রাখা সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত।

আরো পড়ুনঃ রুই মাছের উপকারিতা ও রুই মাছের বৈশিষ্ট্য

অফ টপিক স্বপ্নে শিং মাছ দেখলে কি হয়

স্বপ্ন নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকেই জানতে চান স্বপ্নে শিং মাছ দেখলে কি হয়। স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা তাবির বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে।

সাধারণ ব্যাখ্যা ও প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী:

রিজিক বৃদ্ধি: স্বপ্নে মাছ দেখা সাধারণত শুভ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এটি হালাল রিজিক বা অর্থপ্রাপ্তির ইঙ্গিত হতে পারে।

সতর্কতা: যেহেতু শিং মাছে কাঁটা থাকে, তাই কেউ কেউ মনে করেন এটি কোনো গোপন শত্রু বা আসন্ন কোনো ঝামেলার ইঙ্গিতও হতে পারে। তবে পানিতে স্বচ্ছন্দে মাছ সাঁতার কাটতে দেখা সাধারণত উন্নতির লক্ষণ। (দ্রষ্টব্য: স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের বিষয় এবং এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।)

আমাদের অন্য একটি সাইট ভিজিট করতে সাব্বির.XYZ তে ক্লিক করুন সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন সহ পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় নানান টিপস। ধন্যবাদ সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ্‌ হাফেয। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!
To Top