সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপারফুডের তালিকায় ড্রাগন ফল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে এই ফলটি প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত করছেন। তবে যেকোনো খাবারের মতোই ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তাই এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা,
লাল ড্রাগন ফলের বিশেষ গুণ, এমনকি ড্রাগন ফল খেলে কি প্রস্রাব লাল হয়—এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরসহ বিস্তারিত সব তথ্য। পাশাপাশি যে সব পাঠক টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি জানতে চান, তাদের জন্য আলাদা নির্দেশনাও যুক্ত আছে।
- আরো পড়ুনঃ এলাচ এর উপকারিতা ও ক্ষতিকারক দিক
ড্রাগন ফলের | ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা অসংখ্য। এতে থাকে ভিটামিন–সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেলস ও ফাইবার যা শরীরকে নানা দিক থেকে সুরক্ষা দেয়। নিচে ড্রাগন ফলের উপকারিতা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হলো—
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ড্রাগন ফলে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন–সি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সিজনাল ফ্লু, ভাইরাস বা সর্দি–কাশি থেকে বাঁচতে ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা বুঝে নিয়মিত খাবার তালিকায় এটি রাখতে পারেন।
পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে
ড্রাগন ফলের ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। অনেক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর ফাইবার গ্রহণের জন্য ড্রাগন ফলের উপকারিতা উল্লেখ করে থাকেন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি–র্যাডিকাল দূর করে। বিশেষ করে লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা আরও বেশি, কারণ এতে বেটালাইন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
ওজন কমাতে সহায়ক
ড্রাগন ফল কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ওজন কমাতে এটি অনেক উপকারী। যারা ডায়েট করছেন, তারা দৈনিক খাবার তালিকায় এই ফল রাখতে পারেন।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়
ড্রাগন ফলের উপকারিতা হিসেবে এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমায়।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
অনেক মা জানতে চান, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা কী। আসলে গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল বেশ উপকারী, যদি পরিমাণমতো খাওয়া যায়।
- এতে থাকা আয়রন রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে।
- ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নে সহায়ক।
- ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন–সি এবং ক্যালসিয়াম মা ও শিশুকে শক্তি দেয়।
তবে গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা
অনেকেই জানতে চান লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা আলাদা কি না।
হ্যাঁ, লাল ড্রাগন ফলে থাকে বেটানিন নামের একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সাধারণ ড্রাগন ফলের চেয়ে বেশি কার্যকর। এটি
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- শরীরে প্রদাহ কমায়
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
- লিভারকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে
এ ছাড়াও ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, লাল ড্রাগন ফল রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করতে পারে।
ড্রাগন ফল খেলে কি প্রস্রাব লাল হয়?
এটি অনেকের সাধারণ প্রশ্ন ড্রাগন ফল খেলে কি প্রস্রাব লাল হয়?
উত্তর হলো: হ্যাঁ, অনেক সময় হতে পারে। বিশেষ করে লাল ড্রাগন ফল বেশি খেলে প্রস্রাব বা মল কিছুটা গোলাপি বা লালচে দেখা যেতে পারে। এটি ক্ষতিকারক নয়, এটি স্বাভাবিক এবং বেটালাইন নামের রংয়ের কারণে ঘটে। তবে যদি দীর্ঘক্ষণ লাল থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা ও ক্ষতিকারক দিক
যদিও ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক, তবুও কিছু অপকারিতা রয়েছে যা জানা জরুরি
- অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা
- অ্যালার্জি হতে পারে
- চুলকানি,ফোলা,মুখে র্যাশ
- ব্লাড সুগার কমে যেতে পারে
কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগী যদি ওষুধের সাথে অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খান, তাহলে ব্লাড সুগার অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
কিডনি রোগীদের সতর্কতা
ড্রাগন ফলে মিনারেল থাকে, তাই কিডনি রোগীরা পরিমাণমতো না খেলে সমস্যা হতে পারে।
- আরো পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা, ও ক্ষতিকারক দিক
- আরো পড়ুনঃ বন টেপারি গাছের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
- আরো পড়ুনঃ এলাচ এর উপকারিতা ও ক্ষতিকারক দিক
টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি
যারা বাড়িতে ড্রাগন ফল গাছ রাখতে চান, তাদের জন্য সহজ টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো
- বড় ড্রাম বা বড় টব নিন (কমপক্ষে ১৬–২০ ইঞ্চি)।
- বালু, মাটি, সার (৫০:৩০:২০ অনুপাতে) মিশিয়ে টব প্রস্তুত করুন।
- ড্রাগন ফলের কাটিং রোপণ করুন।
- ধীরে ধীরে লতায় ভর দেওয়ার জন্য কাঠ বা খুঁটি ব্যবহার করুন।
- সপ্তাহে ২–৩ বার পানি দিন।
- পর্যাপ্ত রোদে রাখলে ৮–১২ মাসের মধ্যে ফল আসতে পারে।
বাড়িতে উৎপাদিত ফলও একইভাবে ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা বজায় রাখে।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই জানা অত্যন্ত জরুরি। উপকারিতার মধ্যে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, পাচনতন্ত্রের উন্নতি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ, ওজন কমানো ইত্যাদি। আবার অপকারিতার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, অ্যালার্জি এবং অতিরিক্ত খেলে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই পরিমাণমতো ড্রাগন ফল খাওয়া উত্তম।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তবে অবশ্যই সঠিক পরিমানে খেতে হবে। যারা বাড়িতে চাষ করতে চান, তারা টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।


