এলাচ বা Cardamom রান্নাঘরের রাজা মসলা হিসেবে পরিচিত। সুগন্ধি স্বাদ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ও ঔষধিগুণের জন্য এলাচ কয়েক হাজার বছর ধরে রান্না ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিরিয়ানি, পোলাও, মিষ্টান্ন, চা কিংবা কফি সব খাবারেই এলাচের স্পর্শ স্বাদকে আরও সমৃদ্ধ করে। তবে এলাচের যেমন অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু সতর্কতাও জানা জরুরি। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাও গুরুত্বপূর্ণ, নাহলে এর আসল সুবাস হারিয়ে যেতে পারে।
চলুন এলাচের ভাল দিক, মন্দ দিক এবং সংরক্ষণের নিয়ম বিস্তারিত দেখি
এলাচের ভাল দিক উপকারিতা:
- হজমশক্তি উন্নত করে
এলাচ হজমে অত্যন্ত কার্যকর। ভারী খাবার যেমন বিরিয়ানি বা পোলাওতে এলাচ ব্যবহারের কারণ হলো এটি অম্লতা কমিয়ে পেটের অস্বস্তি দূর করে। পাকস্থলীর সিক্ততা বজায় রেখে দ্রুত হজমে সাহায্য করে।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
এলাচের সুগন্ধ ও প্রাকৃতিক তেল মুখকে সতেজ রাখে। অনেক টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনারে এলাচের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। সরাসরি একটি এলাচ চিবোলে মুহূর্তেই মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- সর্দি-কাশি ও শ্বাসনালী পরিশুদ্ধ করে
এলাচে থাকা Cineole শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এলাচ–চা সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে বহুল পরিচিত। এছাড়া এলাচযুক্ত গরম পানির বাষ্প নেওয়াও শ্বাসকষ্ট কমায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা
এলাচ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। কিছু গবেষণা বলছে, এলাচ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
- মানসিক চাপ কমায়
এলাচের সুগন্ধ মনকে শান্ত করে, মানসিক ক্লান্তি ও স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এজন্যই এলাচ–চা অনেকের কাছে আরামদায়ক পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়।
এবার জানব এলাচের মন্দ দিক ক্ষতিকর দিক
যদিও এলাচ স্বাস্থ্যের জন্য বেশ নিরাপদ, তবুও অতিরিক্ত সেবনে কিছু সমস্যা হতে পারে—
- অতিরিক্ত সেবনে অম্বল বা গ্যাস হতে পারে
যাদের পেট সেনসিটিভ, তারা বেশি এলাচ খেলে গ্যাস বা অম্বল অনুভব করতে পারেন।
- অ্যালার্জির সম্ভাবনা
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন:
গলা চুলকানো
র্যাশ হওয়াশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- Gallstone থাকলে বিপদ বাড়তে পারে
যাদের পিত্তথলিতে পাথর আছে, তারা যদি বেশি এলাচ খাই তাহলে পেট ব্যথা বা জটিলতা বাড়তে পারে।
- গর্ভবতী মায়েরদের জন্য সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত এলাচ হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই অবশ্যই পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত।
চলুন এবার জানব কিভাবে এলাচ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাই
এলাচের ঘ্রাণ ও স্বাদ ধরে রাখতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি—
১. এয়ারটাইট কন্টেইনারে রাখুন
গ্লাস বা স্টিলের শক্ত এয়ারটাইট জারে রাখলে এলাচের সুবাস দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২. আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন
সূর্যের আলো, রোদ, চুলার তাপ এলাচের সুগন্ধ নষ্ট করে। ঠান্ডা, শুকনো স্থানে রাখাই সবচেয়ে ভালো।
৩. খোসাসহ রাখুন
গুঁড়ো এলাচ দ্রুত সুগন্ধ হারায়। তাই খোসাসহ এলাচ সংরক্ষণ করাই উত্তম। প্রয়োজনমতো গুঁড়ো করুন।
৪. ফ্রিজে রাখলে আরও দীর্ঘদিন টিকে
এয়ারটাইট কন্টেইনারে করে ফ্রিজ বা ফ্রিজারের নিচের অংশে রাখলে ৬–১২ মাস পর্যন্ত সুগন্ধ অটুট থাকে।
৫. ভেজা হাত বা ভেজা চামচ ব্যবহার করবেন না
আর্দ্রতা ঢুকলে এলাচ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
পৃথিবীতে এলাচের প্রকারভেদ ও মান | সবুজ, কালো ও সাদা এলাচের কোয়ালিটি
বিশ্বে এলাচ প্রধানত তিন ধরনের—সবুজ এলাচ, কালো এলাচ এবং সাদা এলাচ। স্বাদ, ঘ্রাণ ও গুণগত মানের ভিত্তিতে এদের ব্যবহারে পার্থক্য রয়েছে।
সবুজ এলাচ | Green Cardamom
সবুজ এলাচকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের এলাচ ধরা হয়। এতে সুগন্ধি তেল ও প্রাকৃতিক ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে “Bold” বা “Super Bold” সবুজ এলাচকে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মিষ্টি, চা, বিরিয়ানি ও পোলাওতে এর ব্যবহার অপরিহার্য।
কালো এলাচ | Black Cardamom
কালো এলাচ আকারে বড় এবং ধোঁয়াটে ঘ্রাণযুক্ত। এটি ভারী মশলা হিসেবে পরিচিত এবং মাংস, সূপ, গ্রিল ও স্ট্যুতে গভীর স্বাদ যোগ করে। গাঢ় রঙ ও শক্ত দানার কালো এলাচকে উচ্চমানের ধরা হয়।
সাদা এলাচ | White Cardamom
সাদা এলাচ হলো রঙ ফর্সা করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত সবুজ এলাচ। এর স্বাদ ও ঘ্রাণ সবুজ এলাচের তুলনায় কম হলেও বেকারি, আরবি–মিষ্টি ও ডেজার্টে এটি জনপ্রিয়।
উপসংহার
এলাচ শুধু স্বাদের জন্য নয়, স্বাস্থ্য উপকারিতা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ও ঔষধি বৈশিষ্ট্যের জন্য আমাদের জীবনযাপনের একটি অপরিহার্য অংশ। তবে যেকোনো ভেষজ খাবারের মতোই এলাচও পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে এলাচের ঘ্রাণ, স্বাদ এবং গুণাগুণ দীর্ঘদিন অক্ষুণ্ন থাকবে।
আমাদের সাইট উপকার বিডি মূলত বেশির ভাগ তথ্য সংগ্রহ করে করি অনলাইন ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে, তাই ভুল থাকলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবেন। আমাদের সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ। সাব্বির

