লাউ উপকারিতা, মিষ্টি লাউ, লাউ গাছের পরিচর্যা

MOHAMMAD SABBIR
0
লাউ উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, খাওয়ার নিয়ম


লাউয়ের অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, সঠিক খাওয়ার নিয়ম, লাউ চাষ পদ্ধতি, সার, পানি ব্যবস্থাপনা এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিস্তারিত জানুন।

লাউ আমাদের দেশের একটি পরিচিত সবজি। এটি শুধু সুস্বাদু নয়, বরং নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। প্রাচীন আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসা সবাই লাউয়ের উপকারিতা নিয়ে একমত। লাউ শরীরকে ঠান্ডা রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন কমায়, কিডনি সুস্থ রাখে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ও পানি দূর করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে লাউ চাষও খুব সহজ, তাই বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা খেত সব জায়গাতেই এটি জন্মানো সম্ভব।


লাউ উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

লাউ মূলত পানি-সমৃদ্ধ একটি সবজি। লাউয়ে প্রায় ৯২–৯৫% পানি থাকে। এ কারণে হজম সহজ হয় এবং শরীর হাইড্রেটেড থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে যা থাকে

  • ক্যালোরি: ১৪–১৬
  • প্রোটিন: ০.৬ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ৩.৪ গ্রাম
  • ফাইবার: ০.৫–১ গ্রাম
  • ভিটামিন C, B6
  • ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট

কম ক্যালোরি ও বেশি পানি–ফাইবারের সংমিশ্রণ লাউকে একটি উৎকৃষ্ট ডায়েটারি সবজি করে তুলেছে।

লাউয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. লাউয়ের ক্যালোরি খুব কম এবং পানি বেশি। এতে ফাইবার থাকার কারণে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। যারা ওজন কমানোর ডায়েট অনুসরণ করেন তাদের জন্য লাউ একটি উত্তম বিকল্প।

২.গরমে লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, পানিশূন্যতা কমে এবং হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে। লাউয়ের জুস বিশেষভাবে কার্যকর।

৩. লাউ অন্ত্র পরিস্কার করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। এতে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে।

৪. লাউতে সোডিয়াম কম ও পটাসিয়াম বেশি। এই ভারসাম্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে।

৫. লাউয়ের পানি ও মিনারেল কিডনি পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। ইউরিক অ্যাসিড কমায়, ফলে গাউট বা জয়েন্ট পেইনের রোগীরা উপকার পায়।

৬. লাউ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে বাড়তে দেয় এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি নিরাপদ।

৭. লাউ লিভার পরিষ্কার রাখে, টক্সিন বের করে দেয় এবং ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে।

৮. লাউয়ের শীতল গুণ মনকে শান্ত করে, স্ট্রেস কমায় এবং ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে।

লাউ কীভাবে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়?

লাউয়ের জুস

  • সকালবেলা খালি পেটে ১ গ্লাস তাজা লাউয়ের জুস পান করলে হজম ভালো হয়, শরীর ঠান্ডা থাকে ও ওজন কমে।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা সামান্য কাকরোল বা করেলা মিশিয়েও নিতে পারেন।

দ্রষ্টব্য: লাউয়ের জুস তেতো হলে খাবেন না।

লাউয়ের ভাজি বা তরকারি

সাধারণভাবে রান্না করা লাউয়ে পুষ্টিগুণ ভালো থাকে। ডাল-লাউ, চিংড়ি-লাউ, লাউয়ের খিচুড়ি— এগুলোও শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।

লাউ চচ্চড়ি বা ভর্তা

কম মশলায় তৈরি লাউয়ের চচ্চড়ি বা ভর্তা হজম সহজ করে এবং পাকস্থলীকে আরাম দেয়।

লাউয়ের স্যুপ

ডায়েটারি খাবার হিসেবে লাউয়ের স্যুপ অত্যন্ত কার্যকর। ওজন কমাতে বা অসুস্থতায় দ্রুত সুস্থ হতে এটি ভালো।

লাউয়ের বীজ

লাউয়ের বীজে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিন। এটি পরিমাণমতো খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি ও মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।

লাউ উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, খাওয়ার নিয়ম

লাউ চাষ পদ্ধতি | বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা জমিতে

লাউ চাষ অত্যন্ত সহজ এবং স্বল্প পরিশ্রমে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এখানে ধাপে ধাপে লাউ চাষের সহজ গাইড দেওয়া হলো—

সঠিক জমি নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুত

  • দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।
  • মাটি ঝুরঝুরে ও পানি নিষ্কাশন ভালো হতে হবে।
  • প্রতি গর্তে ৮–১০ কেজি পচা গোবর বা কম্পোস্ট মেশাতে হবে।
  • প্রয়োজনে কিছু ছাই ও সামান্য চুন মিশিয়ে নিলে রোগ কম হয়।

বীজ বপন সময়

বাংলাদেশে লাউ বপনের উপযুক্ত সময় হলঃ

  • ফাল্গুন–চৈত্র (ফেব্রুয়ারি–এপ্রিল)
  • ভাদ্র–আশ্বিন (আগস্ট–অক্টোবর)

তবে এখন প্রায় সারাবছরই লাউ চাষ করা যায়।

বীজ বপন ও চারা পরিচর্যা

  • প্রতিটি গর্তে ২–৩টি লাউ বীজ বপন করুন।
  • চারা বড় হলে একটি সবল চারাই রেখে বাকি গুলো তুলে ফেলুন।
  • নিয়মিত পানি দিতে হবে তবে জলাবদ্ধতা যেন না হয়।

বাঁশের মাচা তৈরি

লাউ লতা জাতীয় ফসল, তাই মাচা বা তৈরি খুব জরুরি।
বাঁশ বা দড়ি দিয়ে ৬ বা ৭ ফুট উঁচু মাচা বানানো উত্তম।
লতা বেড়ে উঠে গেলে মাচায় তুলে দিতে হবে।

সার প্রয়োগ

  • গোবর সার: গর্ত তৈরির সময়
  • ইউরিয়া: ফল ধরার পরে সামান্য
  • টিএসপি ও এমওপি: চারা রোপণের ১৫ অথবা ২০ দিন পর

কেমিক্যাল সার কম ব্যবহার করাই ভালো; জৈব সার সবচেয়ে ভালো ফল দেয়।

রোগবালাই ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ

  • ডাউনি মিলডিউ, পাউডারি মিলডিউ লাউয়ের সাধারণ রোগ।
  • আক্রান্ত পাতা দ্রুত ফেলে দিতে হবে।
  • নিম তেল, জৈব ছত্রাকনাশক বা প্রয়োজন হলে নিরাপদ কীটনাশক ব্যবহার করা যায়।
  • লতাপাতা ঘন হয়ে গেলে ছাঁটাই করুন যাতে বাতাস চলাচল হয়।

ফল সংগ্রহ

বীজ বপনের ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে লাউ তোলার উপযুক্ত হয়।
ফল নরম ও সবুজ অবস্থায় তুললে স্বাদ বেশি পাওয়া যায়।

লাউ উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, খাওয়ার নিয়ম

লাউ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা


লাউ এমন একটি সবজি যা পুষ্টিগুণে ভরপুর, সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত লাউ খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে, হজমশক্তি ভালো থাকে, কিডনি–হার্ট সুস্থ থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাশাপাশি লাউ চাষও বেশ সহজ, তাই বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী চাষ করা যায়।

আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হন বা নিজের বাগানে সহজে জন্মানো একটি সবজি খুঁজছেন, তবে লাউই হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!
To Top